গৌরনদী প্রতিনিধি ॥ প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত বরিশালের গৌরনদী উপজেলার সকল ইউপি সমুহের নির্বাচন অনুষ্ঠানের আড়াই মাস পরে উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের বাঘমারা বড় দুলালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আলমারিতে কিছু ব্যালট পেপার ও দুই’শ ব্যালটের মুড়ি পাওয়ার ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গৌরনদী উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সোমবার দুপুরে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ মিজানুর রহমান তালুকদারকে কমিটির আহবায়ক, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল জলিলকে সদস্য সচিব ও উপজেলা মৎস্য অফিসার মোঃ আবুল বাশারকে কমিটির সদস্য করে তিন সদস্য বিশিষ্ট ওই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
তদন্ত কমিটি গঠনের সত্যতা নিশ্চিত করে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস জানান, ওই ভোট কেন্দ্রের কিছু ব্যালট পেপার ও দুই’শ ব্যালটের মুড়ি পাওয়ার ঘটনাটি আমি অবহিত হওয়ার পর এ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে আজ দুপুরে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। ওই কমিটিকে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে ঘটনার তদন্ত পূর্বক লিখিত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পেলেই আমরা পরিস্কার ধারনা পাবো যে, সেখানে ভোট গ্রহনে কোন অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়েছে কিনা। নাকি প্রিসাইডিং অফিসাদের দায়িত্বে অবহেলা ছিল। কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করে এ ব্যাপারে পরবর্তি প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।
জানাগেছে, করোনার প্রভাবে দীর্ঘ প্রায় ১৭ মাস বিদ্যালয় বন্ধ থাকার পর উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের বাঘমারা বড় দুলালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালটিতে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী রোববার থেকে শিক্ষার্থীদের পাঠদান শুরু করা হয়। ওইদিন দুপুরে বিদ্যালয়ের স্টিলের আলমারি খুলে প্রয়োজনীয় কিছু কাগজপত্র খুঁজতে গিয়ে প্রধান শিক্ষক আবদুল লতিফ খান আলমারির ভেতরে গত ২১জুন অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে ব্যাবহৃত ওই বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের কিছু ব্যালট পেপার ও দুই’শ ব্যালটের মুড়ি দেখতে পান।
এরপর প্রধান শিক্ষক তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাটি বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতিসহ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফয়সল জামিল ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপিন চন্দ্র বিশ্বাসকে জানান। মুহুর্তের মধ্যে এ ঘটনা এলাকায় জানাজানি হলে স্থানীয়দের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়। এলাকাবাসী জড়ো হয়ে নির্বাচনে কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ তোলেন ওই ভোটকেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালনকারী উপজেলার হোসনাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মতিউল ইসলামের বিরুদ্ধে।
বার্থী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের পরাজিত ইউপি সদস্য পদপ্রার্থী ও সাবেক ইউপি সদস্য খায়রুল আহসান খোকন অভিযোগ করে বলেন, বিগত নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে তার বিজয় ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। কারচুপির মাধ্যমে তাকে পরাজিত করা হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিকার পেতে তিনি উপজেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছিলেন। কিন্তু প্রশাসন তার অভিযোগ আমলে নেয়নি। এখন বিদ্যালয়ের আলমারির ভেতরে ব্যালট পেপার ও ব্যালটের মুড়ি পাওয়ার ফলে নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি, অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে দাবি করে আমি যে অভিযোগ করেছিলাম তা সত্য বলে প্রমানিত হল। পরাজিত সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থী শিপ্রা রানী অভিযোগ করে বলেন, তার প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী শাহানাজ বেগমকে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করে প্রিসাইডিং অফিসারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার ও উপজেলার হোসনাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মতিউল ইসলাম। তিনি বলেন, আলমারিতে পাওয়া ব্যালট ও মুড়ির সঙ্গে আমার দায়িত্ব পালনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
Leave a Reply